আপনার যদি নিজের একটি ব্লগ বা ওয়েবসাইট থাকে তবে আপনার ডোমেইন অথরিটি এবং পেজ অথরিটি সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা উচিত। আপনি যদি ব্লগিং নিয়ে কাজ করে থাকেন তবে আপনি অবশ্যই ডোমেইন অথরিটির কথা শুনে থাকবেন। এটাকে সংক্ষেপে DA এবং PA বলা হয়। গুগলের সমস্ত ওয়েবসাইট গুলোর নিজস্ব আলাদা আলাদা ডোমেইন অথরিটি রয়েছে। আপনারও যদি একটি ওয়েবসাইট থাকে, তাহলে সেই ওয়েবসাইটেরও একটি ডোমেইন অথরিটি রয়েছে।
একটি ওয়েবসাইটের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ডোমেইন অথরিটি বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া ডোমেইন অথরিটি বাড়ানোর অনেক উপায় রয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে ভালো হল হাই কোয়ারিটি আর্টিকেল, উচ্চ মানের Dofollow এবং Nofollow ব্যাকলিংক, গেস্ট পোস্ট ইত্যাদি যা ব্যবহার করে বেশির ভাগ ব্লগার তাদের ব্লগের বা ওয়েবসাইটের অথরিটি বাড়ায়।
তাই আজকের পোস্টির মাধ্যমে আপনি জানতে পরবেন ডোমেইন অথরিটি সম্পর্কে বিস্তারিত বিষয়াদি এবং ডোমেইন অথরিটি বাড়ানোর সবচেয়ে সহজ উপায় সম্পর্কে।
ডোমেইন অথরিটি কি?
ডোমেইন অথরিটি যাকে সংক্ষেপে DA বলা হয়। একটি ব্লগের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও বটে। একটি সাইটের যত বেশি DA থাকবে সেই সাইটটির র্যাংকিং তত বেশি বৃদ্ধি পাবে। আসলে DA মানে Google এর কাছে Domain Authority নয়। Moz কোম্পানি একটি টুল সাইট এর অধীনে ডোমেইনটিকে ১ থেকে ১০০ রেটিং দেওয়া হয়ে থাকে। যে সাইটের Domain Rating (DR) বেশি, সার্চ ইঞ্জিনে তার র্যাংকিংও তত উন্নত হয়। তাই যেসব সাইটের DA/DR বেশি সেখানে ট্রাফিক বেশি পাওয়া যায়।
আমি শুরুতেই বলেছি যে প্রতিটি ওয়েবসাইটের Domain Authority আলাদা হয় এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে সাইটের অথরিটিও বাড়ে যায়। তবে এর মানে এই নয়, যে সাইটটি খুব পুরনো তারও রেটিং বেশি থাকবে। যদি একটি সাইটে উচ্চমানের SEO ফ্রেন্ডলি বিষয়বস্তু পাবলিশ করা হয় এবং আরও অনেক কিছুর মাধ্যমে যেমন খুব উচ্চ মানের ব্যাকলিংক তৈরি করে সাইটের অথরিটি অনেকাংশে বাড়ানো যায়।
পেজ অথরিটি (PA) কি?
ডোমেইন অথরিটি যেমন Moz কোম্পানি তৈরি করেছে, পেজ অথরিটিও (PA) কিন্তু তৈরি করেছে মার্কেটিং অ্যানালিটিক্স কোম্পানি Moz। Page Authority এমন একটি স্কোর যা পৃষ্ঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। যদি আপনি ব্লগের একটি পৃষ্ঠাকে সেরা হিসেবে র্যাংক করতে চান, তাহলে আপনাকে সেই পেজের Page Authority বাড়াতে হবে।
আরও পড়ুনঃ ঘরে বসে অনলাইন ব্যবসায় শুরু করার উপায়?
কারণ আপনার পোস্টের র্যাংকিং Page Authority উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়, তার মানে বিষয়টি এমন নয় যে শুধু পেইজের সাথে বেশি সম্পর্কিত। কারণ যে কোনো পোস্ট মূলত সার্চ ইঞ্জিন কর্তৃপক্ষ সার্চ ইঞ্জিনে র্যাংক করিয়ে থাকে। এমনকি আপনি যদি সাইটে অনন্য এবং সেরা মানের সার্ভিস সরবরাহ করেন, তাহলে আপনার পোস্ট গুলো ভালো র্যাংক করতে পারে।
ডোমেইন অথরিটি বাড়ানোর সবচেয়ে সহজ উপায়
একটি ওয়েবসাইটের ডোমেইন অথরিটি বাড়ানোর অনেক উপায় রয়েছে যেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো:-
সাইটে অর্গানিক ট্র্যাফিক আনতে হবে:
ওয়েবসাইটে ভিজিটর বা ট্র্যাফিকের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো অর্গানিক ট্র্যাফিক। সার্চ ইঞ্জিন গুলোতে কোনো কিছু সার্চ করার পরে যদি কেউ আপনার সাইটটির কোনো আর্টিকেল সার্চ লিস্টে খুঁজে পায় এবং সেখানে ক্লিক করে আপনার ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে, তবে এই ধরণের ভিজিটরকে অর্গানিক ট্র্যাফিক বলা হয়। আপনি যদি ডোমেইন অথরিটি বাড়াতে চান, তাহলে চেষ্টা করুন যাতে ব্যবহারকারীরা আপনার সাইটে অর্গানিক ভাবে আসে।
অর্থাৎ গুগলে সার্চ করে এবং আপনার সাইটের পোস্ট ভিজিট করে। তার জন্য আপনাকে একটি আকর্ষণীয় পোস্ট প্রকাশ করতে হবে। যদি আপনার সাইটের পোস্ট গুলো ইউনিক এবং তথ্য পূর্ণ থাকে তাহলে সাইটে অর্গানিক ট্র্যাফিক পাওয়া যায়। যদি পোস্ট অন্যদের থেকে আলাদা হয় তবে অবশ্যই এটি গুগলে র্যাংক করবে। ফলে অর্গানিক ট্র্যাফিক বাড়বে আর অর্গানিক ট্র্যাফিক বাড়ার কারণে ডোমেইন অথরিটিও বাড়বে।
মানসম্পন্ন ব্যাকলিংক তৈরি করতে হবে:
ওয়েবসাইটের অথরিটি বাড়ানোর জন্য আপনাকে বিভিন্ন সাইট থেকে মানসম্পন্ন ব্যাকলিংক তৈরি করতে হবে। মনে রাখতে হবে যে সকল সাইটে উচ্চ স্প্যাম স্কোর (Spam Score) আছে এমন কোনও সাইট থেকে ব্যাকলিংক নেওয়া উচিত নয়। শুধুমাত্র বিশ্বস্ত সাইট থেকে ব্লগের জন্য ব্যাকলিংক তৈরি করতে হবে। এতে করে আপনার সাইটের ডোমেন অথরিটি বাড়ানো সম্ভব।
আরও পড়ুনঃ ওয়েবসাইট (Website) কি? ওয়েবসাইট কত প্রকার ও কি কি?
কমেন্ট ব্যাকলিংক:
কমেন্ট ব্যাকলিংক তৈরি করার জন্য আমাদেরকে এমন সব সাইট গুলো খুঁজে বের করতে হবে যেখানে ট্রাফিক বেশি আসে। এই ধরনের সাইটে মূলত কমেন্ট করতে হবে এবং কমেন্টে আপনার ওয়েবসাইটের লিংক যুক্ত করে দিতে হবে, যাতে পাঠকরা আপনার সাইটটি দেখতে পারেন। মনে রাখবেন এই ধরনের সাইটগুলো থেকে নেওয়া বেশিরভাগ ব্যাকলিংক কিন্তু Nofollow হয়ে থাকে। আবার এটিও ঠিক যে Dofollow ব্যাকলিংক এর পাশাপাশি সাইটে Nofollow ব্যাকলিংক থাকা প্রয়োজন।
আরও পড়ুনঃ আগুন লাগলে করনীয়
গেস্ট পোস্ট করতে হবে:
বিভিন্ন জনপ্রিয় ভাল ব্লগ সাইট গুলোতে গেস্ট পোস্ট করতে হবে। এখন আপনার মনে প্রশ্ন তৈরি হতে পারে, নিজের ওয়েবসাইট রেখে অন্য ওয়েবসাইটে কেন পোস্ট করতে হবে? আপনার সাইটের ভিজিটর বাড়ানোর জন্য আপনাকে গেস্ট পোস্ট করতে হবে। বিভিন্ন জনপ্রিয় ভাল ব্লগ সাইট গুলোতে গেস্ট পোস্ট করার মাধ্যমে আপনি সেই আর্টিকেলের মাঝে নিজের ওয়েবসাইটের লিংক যুক্ত করতে পারেন।
ফলে উক্ত ওয়েবসাইটের ভিজিটররা আপনার সাইটের লিংকটিতে ক্লিক করে আপনার ওয়েবসাইটে চলে আসবে। এছাড়াও জনপ্রিয় ওয়েবসাইট গুলোতে গেস্ট পোস্ট করে নিজের ওয়েবসাইটের লিংকটি দিতে পারলে বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিন গুলোর কাছে আপনার ওয়েবসাইটটি গ্রহণযোগ্যতা বেশি পা বে। ফলে আপনার সাইটে ভিজিটরও বাড়বে সেই সাথে আপনার সাইটের ডোমেইন অথরিটিও।
আরও পড়ুনঃ জনপ্রিয় কিছু মুভি ডাউনলোড করার ওয়েবসাইট
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা:
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্লাটফর্মে আপনার সাইটের নামে একাউন্ট তৈরি করতে হবে। আপনি ফেসবুকে একটি পেজ তৈরি করুন এবং যেখানে আপনি ব্লগে প্রকাশিত পোস্টগুলি শেয়ার করতে থাকুন। এটি করার ম্যাধমে সেখান থেকে আপনার ব্লগে ট্র্যাফিক আসবে, পেজের ফলোয়ার বাড়বে এবং সেই সাথে আপনার সাইট ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। একইভাবে ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, লিঙ্কডইন, টেলিগ্রামের মতো বিভিন্ন প্লাটফর্মে সাইটের নামে একটি করে একাউন্ট তৈরি করবেন। এতে আপনার পাঠক বাড়বে, বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্র্যাফিক আসবে এবং ডোমেইন অথরিটিও বৃদ্ধি পাবে।
সাইট লোডিং স্পীড ঠিক রাখতে হবে:
যদি আপনার সাইট লোডিং হতে সময় বেশি লাগে তবে এটি ব্যবহারকারীদের সাইট থেকে বাউন্স ব্যাক করে। যার ফলে বাউন্স রেট বেড়ে যায়, যেটি সাইটের উপর খারাপ প্রভাব পরে। তাই ওয়েবসাইটটি সহজ ও দ্রুততার সাথে লোডিং হওয়ার ব্যবস্থা করুন। ওয়েবসাইটটি সহজ ও দ্রুত লোডিং করার জন্য সহজ ধরণের টেমপ্লেট ব্যবহার করুন। এতে করে যখন সাইটটি দ্রুত লোড হবে তখন ব্যবহারকারীদের বেশি অপেক্ষা করতে হবে না।
আরও পড়ুনঃ টেকনিক্যাল এসইও গুরুত্ব
কিভাবে ওয়েবসাইটের পেজ অথরিটি (PA) বাড়ানো যায়?
Domain Authority (DA) এবং Page Authority (PA) দুটি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। যখন ডোমেইন অথরিটি উন্নত করতে হয়, তখন উপরে উল্লেখিত বিষয় গুলো মেনে ডোমেইন অথরিটি বাড়ানো যায়। একইভাবে পেজ অথরিটি বাড়াতে হলে পেজের জন্য আরও মানসম্পন্ন ব্যাকলিংক তৈরি করতে হবে। এ সকল বিষয় গুলো মাথায় রেখে আপনি পেজ অথরিটি বাড়াতে পারবেন। ডোমেইন অথরিটির তুলনায় পেজ অথরিটি দ্রুত বাড়ানো যায়। পেজ অথরিটি দ্রুত বাড়ানোর উপায় হচ্ছে ব্যাকলিংক তৈরি কারার সময় আপনার ব্লগের সাথে সম্পর্কিত ব্লগে কমেন্টের মাধ্যমে ব্যাকলিংক তৈরি করতে হবে।
আশা করি এই পোস্টের মাধ্যমে ডোমেইন অথরিটি কি? ডোমেইন অথরিটি বাড়ানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন। তাছাড়া এই আর্টিকেল সম্পর্কিত কোনো জিজ্ঞাসা থাকে তা করমন্ট করে জানাতে পারেন।