দেশীয় রাস্তায় ৩৫০ সিসি মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি পেল!

দেশীয় রাস্তায় ৩৫০ সিসি মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি পেল!

আমাদের দেশে ১৬৫ সিসি অধিক ক্ষমতা সম্পূর্ণ মোটরসাইকেল চলার অনুমোদন ছিল না। কিন্তু বর্তমানে একাধিক প্রতিষ্ঠানের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে অবশেষে দেশীয় রাস্তায় ৩৫০ সিসি ইঞ্জিন ক্ষমতা সম্পূর্ণ মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় এই অনুমতি দিয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ইয়ামাহা মোটরসাইকেলের পরিচালক ও উৎপাদন অংশীদার এসিআই মোটরসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এফ এইচ আনসারি। তিনি জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় দেশীয় রাস্তায় ৩৫০ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি দিয়েছে। তবে এ সকল মোটরসাইকেল সম্পূর্ণ তৈরি অবস্থায় আমদানি করা যাবে না। শুধু বিদেশ থেকে সিকেডি অবস্থায় আমদানি করে দেশীয় কারখানায় সংযোজন করে বাজারজাত করা যাবে।

২০১৫ থেকে ২০১৮ সালের আমদানি নীতিতে সরকার মোটরসাইকেলের সিসি লিমিট ১৬৫ তে উন্নীত করে। পরবর্তীতে বেশ কয়েকটি কোম্পানি মোটরসাইকেলের উপর থেকে সিসি লিমিট তুলে নেওয়ার দাবি করে। তবে সরকার তার আমদানি নীতির উপর বহাল থাকে।

আবার ২০২১ সালের শুরুতে বাংলাদেশ ট্রেড এ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) পুনরায় মোটরসাইকেলের সিসি লিমিট তুলে নেওয়ার জন্য সুপারিশ করে। বিটিটিসি মতে মোটরসাইকেলের সিসির সঙ্গে তার গতির কোন সম্পর্ক নেই। ৩০০ বা ৫০০ সিসির মোটরসাইকেলে সর্বোচ্চ যে গতি তোলা সম্ভব, ১৬৫ সিসির মোটরসাইকেলেও সেই গতি তোলা সম্ভব। তারা আরো বলে বিশ্বের কোথাও মোটরসাইকেলের সিসি লিমিট নেই। এতে করে তারা সুপারিশ করে ৩৫০ সিসি পযৃন্ত অনুমোদন দেওয়ার। যেহেতু একবারে সিসি লিমিট তুলে নেওয়া হলে দেশীয় মোটরসাইকেল ব্যবসায়ীরা ক্ষতি গ্রস্থ হবে। সেই দিক বিবেচনা করে প্রথম অবস্থায় ৩৫০ সিসি,পরবর্তীতে ৫০০ সিসি করা এবং এক পর্যায়ে পুরোপুরি সিসি লিমিট তুলে নেওয়া যেতে পারে।

ঠ্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী দীর্ঘদিন দেশে মোটরসাইকেলের সিসি লিমিট ছিল ১৫৫ সিসি এবং ২০১৭ সালের আগষ্ট থেকে সিসি লিমিট ১৬৫ সিসিতে উন্নীত করা হয়। তবে শুধুমাত্র পুলিশের ক্ষেত্রে সিসি সীমা কার্যকর হয়নি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের এই সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেন টিভিস ব্যান্ডের মোটরসাইকেল উৎপাদন ও বিপণনকালী টিভিএস অটো বাংলাদেশের প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা (সিইও) বিপ্লব কুমার রায়। বেশি সিসির মোটরসাইকেলের নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশ্ন করলে বিপ্লব কুমার রায় বলেন, উচ্চ সিসির মোটরসাইকেল যেহেতু আধুনিক (অধিক ফিচার যুক্ত), তাই এইসব মোটরসাইকেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও অধিক পরিমান। যুক্তরাজ্যের ঐতিহহ্যবাহী মোটরসাইকেল প্রতিষ্ঠান রয়েল এনফিল্ড বাংলাদেশের বাজারে আনতে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে কারখানা স্থাপন করেছে ইফাদ গ্রুপ। এত দিন বেশি সিসির মোটরসাইকেল দেশীয় রাস্তায় চলার অনুমতি না থাকায় তারা কোন কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি এবং দেশীয় বাজারে রয়েল এনফিল্ড ৩৫০ সিসির বাইক কবে আসবে তা নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনার মধ্যে ছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সিদ্ধান্তের পর সব অনিশ্চয়তা ও জল্পনা-কল্পনার  অবসান ঘুচল বলে জানান প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

ইফাদ গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান তাসকিন আহমেদ জানান যে ইফাদ গ্রুপ দেশের বাজারে আগামী জুন মাসে ৩৫০ সিসির ক্ষমতা সম্পূর্ণ রয়েল এনফিল্ড আনুষ্ঠানিকভাবে ছাড়বে। এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে এ মোটরসাইকেল রপ্তানি শুরু করবে। তিতি আরও বলেন রয়েল এনফিল্ড এর সঙ্গে চুক্তির পর দেশের মোটরসাইকেলের ইজ্ঞিনের ক্ষমতাসীমা বাড়ানোর জন্য সরকারকে রাজি করানোর চেষ্টা করছিল ইফাদ গ্রুপ। এদিকে বাংলাদেশের ইয়মাহা মোটরের একমাত্র পরিবেশক ও উৎপাদন অংশীদার এসিআই মোটরসেরব্যবস্থাপনা পরিচালক এফএইচ আনসারি জানান, মোটরসাইকেলের সিসি যত বেশি, নিরাপত্তা তত ভালো । তাই দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে সিসিসীমা বাড়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

যদিও স্থানীয় সড়কে ৩৫০ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেলের অনমতি দেওয়ায় সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ মোটরসাইকেল অ্যাসেম্বলারস অ্যান্ড ম্যানফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএমএ)। তাদের দাবি বিদ্যামান নীতির সীমাবদ্ধতার অধীনে বর্তমান নির্মাতারা ৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ করেছেন। তাই হঠাৎ করে কোনো নীতি পরিবর্তনের কারণে বাজারে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।

Table of Contents

About The Author

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top