পরকাল বলে কি কিছু আছে?

পরকাল বলে কি কিছু আছে?

আজ একটি ভিন্ন ধরনের লিখা আপনাদের সাথে শেয়ার করব। আমার এই পোস্ট টাইটেলটি দেখে অনেকের মনে কিছু না কিছু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। শুধু তাই নয় বরং বিরুপ মন্তব্য প্রকাশ করতে পারেন। এটা হওয়া স্বাভাবিক। এখন মূল প্রতিপাদ্য বিষয় আলোকপাত করা যাকপরকাল বলে কি কিছু আছে? বিষয়ে আলোচনা  করতে গেলে প্রথমে একটি কাল্পনীক কাহিনী বা ব্যাখ্যা আপনাদেরকে বলতে হবে। চলুন কাল্পনীক ব্যাখ্যাটি আপনাদের সাথে শেয়ার করি।

মূলত Wayne W.Dyer একজন বিখ্যাত লেখক তার লেখা “You Sacred
Self (Making the Decision to Be Free)”
এই মোটিভেশনাল বইয়ে খুব চমৎকার একটি কাল্পনীক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আর কাল্পনীক ব্যাখ্যাটি হল
:

একটি মাতৃগর্ভে দুই যমজ শিশুর মধ্যে কথোপকথোন হচ্ছিল, তাদের প্রথম জন দ্বিতীয় জনকে জিজ্ঞাস করল, তুমি কি প্রসব পরবর্তী জীবনে বিশ্বাস করো?

দ্বিতীয় জন বলল, অবশ্যই করি, নিশ্চই প্রসব পরবর্তী জীবন বলে কিছু আছে। হয়তো প্রসব পরবর্তী জীবনের প্রস্তুতির জন্য আজ আমরা এখানে।

প্রথম জন বলল, আরে বোকা প্রসব পরবর্তী জীবন বলে কিছু নেই। আচ্ছা তোমার এই কাল্পনীক জগৎ কেমন হতে পারে বলতো।

দ্বিতীয় জন বলল, আমি সঠিক জানি না, তবে হতে পারে সেখানে এখানকার তুলনায় অনেক বেশি আলো থাকবে, হতে পারে সেখানে আমাদের পা দিয়ে হাঁটতে হবে, হতে পারে আমরা নিজেরাই মুখ দিয়ে খাবার গ্রহন করতে পারবো। হয়তো সেই জগৎ আমাদের অন্যান্য সব ইন্দ্রেয় থাকবে যা এখন আমরা কল্পনাও করতে পারছি না।

প্রথম জন বলল, এগুলো নিছক কল্পনা ছাড়া আর কিছুই না। পা দিয়ে হাঁটা হাঁটি তা অসম্ভব, মুখ দিয়ে খাবার খাওয়া তা কল্পনার বাইরে। আমাদের শরীরের যাবতীয় পুষ্টি আসে এই নাড়ীর মাধ্যমে কিন্তু নাড়ীর এই স্বল্প দৈর্ঘ্য কখনো প্রসব পরবর্তী জীবনের পক্ষে যুক্তি হতে পারে না। প্রসব পরবর্তী জীবন বলতে আদৌ কিছু নেই। এটা একটা বতুলতা মাত্র।

দ্বিতীয় জন বলল, আমি মনে করি প্রসব পরবর্তী জীবন বলে কিছু আছে। আর সেটি এই মাতৃগর্ভের থেকে অনেক ভিন্ন। হয়তো আমাদের জীবন ধারনের জন্য অই জগৎতে এই মাতৃগর্ভের নাড়ীর প্রয়োজন হবে না।

প্রথম জন বলল, আরে বোকা প্রসব পরবর্তী জীবন বলে যদি কিছু থেকে থাকে তাহলে সেই জীবন থেকে এই জীবনে ফেরত আসে না কেন? আসলে প্রসব পরবর্তী জীবন বলে কিছু নেই। প্রসব হচ্ছে জীবনের শেষ, এরপর আর কিছুই নেই। আছে কেবল অন্ধকার আর শূন্যতা।

দ্বিতীয় জন বলল, আমি ঠিক জানি না, হতে পারে সেই জগৎতে আমাদের সাথে আমাদের মায়ের দেখা হবে, মা হয়তো সে জগৎতে আমাদের দেখা শোনা করবে।

প্রথম জন হাসতে হাসতে বলল, মা তুমি মাতে বিশ্বাস কর? যদি মা বলে কিছু থেকে থাকে তাহলে সে এখন কোথায়?

দ্বিতীয় জন বলল, সে আমাদের চারপাশে বিরাজমান আছে, সে আমাদের ঘিরে আছে, আমরা তার মাঝেই বেঁচে আছি। তাকে ছাড়া জগৎ অসম্ভব।

প্রথম জন বলল, যেহেতু আমরা মা বলে কিছু দেখিনা, অনুভব করি না। সুতরাং এর যুক্তি সংগত ব্যাখ্যা হলো মা বলে কিছু নেই।

দ্বিতীয় জন হেসে হেসে বলল, মাঝে মাঝে যখন তুমি নিরব থাকো, তখন মনোযোগ সহকারে যদি খেয়াল করো তাহলে তুমি তার উপস্থিতি টের পাবে। তুমি তার কন্ঠ শুনতে পাবে এবং আরও শুনতে পাবে তিনি আমাদের দরদ ভরা কন্ঠ দিয়ে আমাদের ডাকছে।

এখন এই কাল্পনীক ব্যাখ্যাটি জানার পর আশা করি এই কাল্পনীক ব্যাখ্যার অন্তরনিহিত ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। আশা করি সবাই বিষটি অনধাবন করতে পেরেছেন।

পরিশেষে বলা যায় যে, কাল্পনীক ব্যাখ্যার আলোকে পরকাল দেখা যায় না, সৃষ্টাকে দেখা যায় না, অনুভব করা যায় না বলে যারা তাতে বিশ্বাস করতে চায় না, হেসে উড়িয়ে দেয় তাদের জন্য এটি একটি দরুন উত্তর। প্রত্যেক মানুষকে
যেমন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে হবে এটি যেমন চিরন্তন সত্য, ঠিক তেমনি পরকালের জীবনও
প্রত্যক মানুষকে গ্রহণ করতে হবে। তাই আমাদের এই মায়ার জগৎতের উপর গুরুত্ব আরোপ না করে
পরকালের উপর আমাদের গুরুত্ব আরোপ  করতে হবে।

যদি এই লেখা বা পোষ্ট ভাল লেগে থাকে বা মতামত দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে আপনার মূল্যবান মতামত দেওয়া জন্য অনুরোধ করছি।  

Table of Contents

About The Author

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top