ভূমিকম্প বা Earthquake হলে আগাম পুর্বাভাস পাওয়া কি সম্ভব?

ভূমিকম্প বা Earthquake হলে আগাম পুর্বাভাস পাওয়া কি সম্ভব?

 

আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন যে আপনার পায়ের নিচের মাটি কেন কাঁপছে? ভূমিকম্প বা Earthquake শক্তিশালী প্রাকৃতিক ঘটনা, ইতিহাস জুড়ে মানুষকে মুগ্ধ করেছে। এই ভূতাত্তিক উত্থানগুলি প্রচুর পরিমাণে শক্তি সরবরাহ করে, যার ফলে মাটি তীব্রভাবে কাঁপতে থাকে। এই নিবন্ধে, আমরা ভূমিকম্প এর মূল ভিত্তি বা চিত্তাকর্ষক জগতে প্রবেশ করব। তাছাড়াও আমরা ভূমিকম্প কি? ভূমিকম্প কেন হয়? ভূমিকম্প থেকে সুরক্ষিত থাকার উপায় সমূহ জানার চেষ্টা করব।

ভূমিকম্প বা Earthquake কি (What is an Earthquake) ?

ভূমিকম্প বা Earthquake বলতে পৃথিবীর ভূত্বকে আকস্মিকভাবে ভূমিকম্পশক্তি নিঃসরণের ফলে ভূমিক কম্পন বা কম্পনকে বোঝায়। ভূমিকম্পের সময় উৎপাদিত ভূকম্পন তরঙ্গগুলি হাজার হাজার মাইল ভ্রমণ করতে পারে, তাদের পথে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। আরও বলতে গেলে ভূ-অভ্যন্তরে শিলায় পীড়নের জন্যে যে শক্তি সঞ্চিত হয়, সে শক্তি হঠাৎ মুক্তি পেলে ভূ-পৃষ্ঠে ক্ষণিকের জন্য কেঁপে উঠে এবং ভূ-ত্বকের কিছু অংশ আন্দোলিত হয়, এইরূপ আকস্মিক ও ক্ষণস্থায়ী কম্পনকে ভূমিকম্প বলে। সাধারণত কম্পন-তরঙ্গ থেকে যে শক্তির সৃষ্টি হয়, তা ভূমিকম্পের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এই তরঙ্গ ভূ-গর্ভের কোন নিদিষ্ট অঞ্চলে উৎপন্ন হয় এবং উৎপত্তিস্থল থেকে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

আরও পড়ুনঃ রয়েল এনফিল্ড মোটরসাইকেলের যাত্রা ও ইতিহাস

ভূমিকম্প সাধারণত কয়েক সেকেন্ড থেকে শুরু করে ১/২ মিনিট বিদ্যামান থাকে। তবে এর থেকে বেশি সময় পর্যন্ত স্থায়ী ছিল খুব কমসংখ্যক ভূমিকম্প। এই সব ভূমিকম্প এর স্থায়ীত্ব বেশি থাকলেও এর মাত্র খুব কম পরিমানে ছিল বলে তা অনুভবও করা যায়নি। তবে শক্তিশালী ও বিধ্বংসী ভূমিকম্পে ব্যাপক পরিমানে ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং অসংখ্য প্রাণহানিও ঘটে।

ভূমিকম্প কেন হয়?

ভূমিকম্প বা Earthquake কেন হয় সে সম্পর্কে জানতে হলে আমাদেরকে প্রথমে ভূ-পৃষ্ঠের গঠন প্রনালী সম্পর্কে কিছুটা ধারনা নিতে হবে। ভূ-অভ্যন্ত অসংখ্য শিলার দ্বারা পরিপূর্ণ। মূলত যখন এই সব শিলা গুলো একটি যখন অন্য একটির সাথে সংঘর্ষ হয় এবং এই সংঘর্ষ এর ফলে যে শক্তি উৎপন্ন হয় তখনই ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়। এছাড়া ভূমিকম্প সৃষ্টি হওয়ার অন্যতম কারণও আছে তা হলঃ ভূ-পৃষ্ঠের হঠাৎ পরিবর্তন, ভূ-পৃষ্ঠের শিলাচ্যুতি এবং আগেনয়গিরির অগ্নুৎপাত।

পৃথিবীর উপরের অংশ মূলত অনেকগুলো অনমনীয় প্লেটের মাধ্যমে গঠিত। এই সকল প্লেটগুলোকে বলা হয় টেকটোনিক প্লেট। টেকটোনিক প্লেট গুলো আস্তে আস্তে একটি অন্যটি থেকে আলাদা হয়ে গেছে। এগুলো একটি অন্যটির সাথে পাশাপাশে লেগে থাকে এবং ধীরে ধীরে স্থান পরিবর্তনও করে আর বিভিন্ন কারণে এদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট শক্তি সিসমীক তরঙ্গ আকারে ছড়িয়ে পড়ে ভূ-পৃষ্ঠে। এর ফলে এই তরঙ্গ শক্তি ভূ-পৃষ্ঠের উপরে চলে আসে। এরপর পর্যাপ্ত শক্তির প্রভাবে ভূ-পৃষ্ঠে কম্পন সৃষ্টি করে। আর এই কম্পনকেই বলা হয় ভূমিকম্প । এই ভূ-কম্পনের জন্য ফল্ট লাইনেরও অনেক ভূমিকা রয়েছে।

ভূ-ত্বকের একটি বিশাল অংশকে বলা হয় টেকটোনিক ফল্ট। পাশাপাশি দুটি প্লেটের মাঝে যে ফাটল থাকে এই ফাটলকে ফল্ট লাইন বলা হয়। ভূ- অভ্যন্তরে জমা থাকা গ্যাস যখন এই ফাটল দিয়ে উপরে উঠে আসে তখন ওই গ্যাসের স্থানে শূন্যতার সৃষ্টি হয়। তখন পৃথিবীর উপরের তলের চাপ দ্রুত এই শুন্য স্থান পূরণ করতে চায়। এর ফলেই নষ্ট হয় ভূ-অভ্যন্তরের ভারসাম্য এবং সৃষ্টি হয় ভূমিকম্পের।

ভূমিকম্প হলে আগাম পুর্বাভাস পাওয়া কি সম্ভব?

ইতিপূর্বে ভূমিকম্প বা Earthquake কি, ভূমিকম্প কেন হয় সে সম্পর্কে অনেক কিছু আলোচনা করেছি। কিন্তু ভূমিকম্পের আগাম পুর্বাভাস মানব জাতি ও মানব সমাজকে অনেক আংশে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। একবার ভূমিকম্প হলে পরবর্তী ঘন্টাখানেক সময়ের মধ্যে আবারও ভূমিকম্প হতে পারে এর পুর্বাভাস পাওয়া সম্ভব হলেও প্রথম যে কম্পনটি সৃষ্টি হয় তার আগাম পুর্বাভাস অনুমান করা সম্ভব নয়।

বর্তমান আধুনিক যুগের অনেক বড় এক ব্যর্থতা বলে ধারা যায়। কারন এখন পর্যন্ত এমন কোন প্রযুক্তি আবিস্কার হয়নি যার মাধ্যমে ভূমিকম্পের আগাম পুর্বাভাস পাওয়া সম্ভব হয়। অনেকেই ভূমিকম্পের আগাম পুর্বাভাস দেওয়ার দাবি রাখলেও এর কোন বিজ্ঞান সম্মত ভিত্তি নেই। অনেক ভূতাত্তিক বিষয়ক জরিপ সংস্থা তাদের নিজ নিজ মতামতে জানিয়েছেন যে ভূমিকম্প বা Earthquake সম্পর্কে যে পুর্বাভাস দেওয়ার দাবি রাখছে , এই সকল পুর্বাভাস গুলোর কোনটিই সঠিক নয়। তবে সম্ভাবনা যাচাই করা সম্ভব আমাদের কিছু প্রযুক্তির বলে।

যেহেতু ভূমিকম্প বা Earthquake সংগঠিত হয়ে থাকে  বিভিন্ন ফল্ট লাইনে, তাই এই সকল স্থান চিহ্নিত করে ভূমিকম্প কোথায় হতে পারে সে সকল স্থান গুলো চিহ্নিত করা সম্ভব। বিভিন্ন ফল্ট লাইনে ভূমিকম্পের পূর্বের রেকড বিবেচনা বা বিশ্লেষণ করে ধারণা করা যায় যে এই সকল স্থানে কত বছর ধরে এই সকল শক্তি সঞ্চিত রয়েছে। তবে এটা অনিশ্চিত যে এই শক্তি কখন কিভাবে ভূ-পৃষ্ঠে বেরিয়ে আসবে। এই সকল শক্তি ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ধীরে ধীরে হালকা মৃদু ভূমিকম্পের মাধ্যমে বেরিয়ে আসতে পারে আবার বড় কোন শক্তিশালী ভূমিকম্পের মাধ্যমেও বেরিয়ে আসতে পারে। আগাম পুর্বাভাস পাওয়া যায় না বলেই ভূমিকম্প সব থেকে ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে মনে করা হয়।

ভূমিকম্প হলে করণীয় বিষয় গুলো কি?

সাধারণত যখন ভূমিকম্প বা Earthquake সংগঠিত হয় আমাদের পক্ষে কিছুই করার থাকে না কারন কয়েক সেকেন্ড সময়ের ব্যবধানে ঘটে যায় অনেক বড় ধরনের বিপর্যয়। তাই ভূমিকম্প সংগঠিত হবার আগেই নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। যাতে করে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান কিছুটা কম হয়।

প্রথমত আমরা বাড়ি তৈরি করার সময় যদি ভূমিকম্প বা Earthquake প্রতিরোধক করে তৈরি করি তাহলে অনেকাংশেই নিরাপদ থাকা যাবে। তবে ভূমিকম্প শুরু হলে যতটা সম্ভব খোলা জায়গায় আশ্যয় নিতে হবে। এসময় তাড়াহুড়া না করে শান্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে এবং দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। বাহিরে অবস্থান করলে কোন ভাবেই বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করা ঠিক নয়। আর কেউ যদি ভবনের উপরে অবস্থান করলে তাকে ভবনের টেবিল, খাট এর নিচে অবস্থান করতে হবে। সম্ভব হলে মাথার উপর বালিশ, হেলমেট বা নরম কিছু রাখা উচিত।

1 thought on “ভূমিকম্প বা Earthquake হলে আগাম পুর্বাভাস পাওয়া কি সম্ভব?”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top