বাউন্স রেট কি? Bounce Rate কিভাবে কম রাখা যায়? |
বাউন্স রেট (Bounce Rate) হলো গুগল এর এমন এক গুরুত্বপূর্ণ Ranking Factor যার সাহায্যে গুগল যে কোনো ওয়েব পেজের কোয়ালিটি এবং প্রাসঙ্গিকতার বিষয়ে জেনে নিতে পারে।
ব্লগিং এর ক্ষেত্রে আমরা বিভিন্ন SEO Optimization Techniques গুলো ব্যবহার করি। আর SEO Techniques গুলোর ব্যবহার আমরা যে উদ্দেশ্যে করে থাকি তা হলো গুগল সার্চ রেজাল্ট পেজে (SERP) ওয়েব পেজের র্যাংকিং ভালো করা।
তবে আমরা অনেকেই জানি না ব্লগ বা ওয়েবসাইটের Bounce Rate যদি অনেক বেশি হয় তাহলে হাজার ভালো করে SEO করেও কোন লাভ হবে না। বাউন্স রেট বেশি থাকা ওয়েবসাইট গুলো গুগলের নজরে Low quality ওয়েবসাইট। এর কারণ-
- ভিজিটর্স এর ক্ষেত্রে আপনার লিখা আর্টিকেল কতটা কাজে আসে?
- আপনার কনটেন্টটি ইউজার এর দ্বারা সার্চ করা প্রশ্ন বা সমস্যার সাথে জড়িত ও প্রাসঙ্গিক কিনা?
আর এ সকল বিষয়গুলো গুগল একমাত্র বাউন্স রেট এর মাধ্যমে সহজেই বুঝে যেতে পারে। গুগল সব সময় ইউজারে অভিজ্ঞতার কথা চিন্তা করে ওয়েবসাইট গুলোকে তার SERP এ র্যাংক করেন, তাই ওয়েব পেজের বাউন্স রেট কম রাখাটা SEO ক্ষেত্রে অনেক জরুরী।
এক্ষেত্রে যদি আপনার ওয়েবসাইটের বাউন্স রেট অধিক বেশি হয় তাহরে গুগল সার্চ ইঞ্জিন থেকে ট্রাফিক পাওয়ার আশা করে কোনো লাভ হবে না।
ওয়েবসাইটের বাউন্স রেট কি?
Bounce Rate হলো Google Analytics এর একটি সার্ভিস যার মাধ্যমে একটি ওয়েব পেজে আসা ইউজারের আচরণের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যেতে পারে।
মনে করুন আপনি গুগলে সার্চ করলেন “what is bounce rate of a website”। গুগলে বিষয়টি সার্চ করার পর, গুগল আপনাকে আমার লিখা এই আর্টিকেল আপনাকে দেখালো। আপনিও গুগলের দেখা তালিকা থেকে আমার ওয়েবসাইটে ক্লিক করে চলে আসলেন।
প্রথমত Bounce Rate এর উপরে আমার লিখা এই আর্টিকেলটি আপনার ভালো লাগলো এবং আপনি অনেক সময় নিয়ে আর্টিকেলটি পড়লেন। তাই আমার ওয়েব পেজের Bounce Rate প্রচুর কম থাকবে এবং এতে গুগলের কাছে একটি সিগনাল চলে যাবে যে “what is bounce rate of a website” এর প্রশ্নটির সাথে জরিত যেই কনটেন্ট বা উত্তর আমি আমার ওয়েব পেজ লিখেছি সেটা প্রশ্নের সাথে সম্পূর্ণ প্রাসঙ্গিক এবং ইউজার আর্টিকেলটি পছন্দ করেছেন।
এতে গুগল সেই সার্চ করা Keyword এর বিপরীতে বাউন্স রেট নিয়ে লেখা আপনার সেই ওয়েব পেজের র্যাংকিং অনেক ভালো করে দিবে। আর গুগল সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্টে পেজ র্যাংকিং ভালো থাকা মানেই প্রচুর ট্রাফিক।
দ্বিতীয়ত আমার লেখা একটি আর্টিকেল রয়েছে “ওয়ার্ডপ্রেস স্পীড অপ্টিমাইজেশন” নিয়ে। আপনি গুগলে সার্চ করলেন যে, “কিভাবে ওয়ার্ডপ্রেস স্পীড অপ্টিমাইজেশন করতে হয়”। আপনার সার্চ করা প্রশ্ন এর বিপরীতে গুগল আপনাকে সার্চ টার্ম এর সাথে জড়িত বিভিন্ন ওয়েব পেজের তালিকা দিয়ে দিলো। তার মধ্যে আপনি “ওয়ার্ডপ্রেস স্পীড অপ্টিমাইজেশন” নিয়ে লেখা আমার আর্টিকেল পেজে ক্লিক করে ভিজিট করলেন।
Info IT BD সকল আপডেট পেতে ফলো করুন আমাদের গুগল নিউজ চ্যানেলে
আর যদি আর্টিকেলটি আপনার পছন্দ না হয় বা আপনার সার্চ করা বিষয়ের সাথে জড়িত কিছু তথ্য আপনি আর্টিকেলটিতে পাচ্ছেন না, তাহলে কিছু সেকেন্ডের মধ্যেই আপনি আমার ওয়েব পেজ থেকে চলে যাবেন। যেহেতু আপনি আমার ওয়েবসাইট ভিজিট করার কেবল কিছু সেকেন্ডের মধ্যেই আর্টিকেল না পড়ে চলে গেলেন, তাই এক্ষেত্রে আমার ওয়েব পেজের Bounce Rate প্রচুর থাকবে।
সহজ ভাবে বললে, ইউজাররা আমার আর্টিকেল বা কনটেন্ট পছন্দ করছেন না সেটা গুগল বুঝে যাবে। এর ফলে ভবিষ্যতে আপনার আর্টিকেল পেজটি গুগলের দ্বারা তার SERP তালিকাতে নিচে নামিয়ে দেওয়া হবে।
কারণ গুগলের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো ইউজারের কাজে আসা তথ্য ও সঠিক তথ্য প্রদান করা।
Bounce Rate কিভাবে কম রাখা যায়?
১. ওয়েবসাইটের লোডিং স্পীড:
ওয়েবসাইটের Bounce Rate বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে ওয়েবসাইটের লোডিং স্পীড। সুতরাং, কোনো ওয়েবসাইট ৩ সেকেন্ডের মধ্যে লোড না নিলে ৩০% ভিজিটর সেই ওয়েবসাইট ভিজিট না করেই চলে যায়। অর্থাৎ ওয়েবসাইটের Bounce Rate কমাতে হলে শুরুতেই ওয়েবসাইটের লোডিং স্পীড ৩ সেকেন্ডের নিচে নিয়ে আসতে হবে।
২. কনটেন্ট লেখার ব্যাপারে অধিক সতর্ক থাকা:
অনলাইন এবং SEO নিয়ে আমরা যারা কাজ করি তারা এই টার্মটির সাথে খুব পরিচিতি যে Content is King পুরো ওয়েবসাইটে কনটেন্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যে কোন সাইটের কনটেন্ট ভালো হলে ডিজাইন কোয়ালিটি মোটামুটি মানের হলেও ভিজিটর সাইটে থাকবে।
তাই কনটেন্ট লেখার সময় সতর্ক থাকা দরকার। কঠিন এবং দূর্বোধ্য শব্দ এড়িয়ে চলা, এর সাথে লেখা সহজ লেখা উচিত। তা না হলে ভিজিটর পোস্ট পড়ে বিরক্ত হয়ে চলে যেতে পারে। যার ফলে সাইটের বাউন্স রেট বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তাই আর্টিকেলটির বিষয় বস্তুকে কম ভীতি প্রদর্শন করার জন্য কিছু উপায় উল্লেখ করা যেতে পারে:
- শিরোনামের যথাযথ ব্যবহার।
- ঘন ঘন সাবহেডিং।
- উপযুক্ত চিত্র।
- বুলেটযুক্ত তালিকা।
৩. ইরিলেভেন্ট কীওয়ার্ড ব্যবহার না করা:
একটা সময় ছিল যখন ব্লাক হ্যাট টেকনিক ব্যবহার করে ইরিলেভেন্ট/অপ্রাসঙ্গিক কীওয়ার্ড দিয়ে ওয়েবসাইট র্যাংক করানো যেতো। এটা এখনও করা যায় তবে এ ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকতে হবে।
ধরা যাক, আপনি অনলাইন মার্কেটিং সম্পর্কিত একটি ব্লগ নিয়ে কাজ করছেন কারও কাছে শুনলেন হেলথ রিলেটেড প্রোডাক্ট সেল করলে বেশ ভালো লাভ করা সম্ভব। এরপর যদি আপনি আপনার অনলাইন মার্কেটিং সম্পর্কিত ব্লগে হেলথ রিলেটেড কনটেন্ট পোস্ট করেন তাহলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা ১০০ ভাগ। কারণ ভিজিটর আপনার ব্লগে আসবে অনলাইন মার্কেটিং সম্পর্কে জানতে এসে হেলথ রিলেটেড কনটেন্ট লেখা দেখলে ভিজিটর বাউন্স ব্যাক করে চলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এর ফলে আপনার সাইটের বাউন্স রেট বেড়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে।
৪. ইউজার এক্সপেরিয়েন্স:
ইউজার এক্সপেরিয়েন্স যে কোনো ওয়েবসাইটের জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ। পুরো সাইটের ডিজাইন অবশ্যই ইউজার ফ্রেন্ডলি হওয়া চাই। যাতে করে একজন ভিজিটর কোনো ঝামেলা ছাড়াই ওয়েবপেজটি নেভিগেট করতে পারেন। কোনো কারণে ইউজার ইন্টারফেস খারাপ হলে ভিজিটর বেশি সময় ঐ পেজে থাকবে না। যার ফলে ওয়েবসাইটের বাউন্স রেট বেড়ে যাবে।
৫. ইন্টার্নাল লিংকিং তৈরি করা:
ভিজিটরকে ওয়েবসাইটে বেশি সময় আটকে রাখার অন্যতম একটি মাধ্যম হলো ইন্টার্নাল লিংকিং। ধরা যাক ওয়েবসাইটে SEO ক্যাটাগরিতে ৪ টি পোস্ট-
- বেসিক এসইও
- আউটরিচ
- গেষ্টপোস্ট
- ব্যাকলিংক
এখন যদি বেসিক এসইও আর্টিকেলে রিলেভেন্ট ওয়েতে লিংক তৈরি করা, অন্য পোস্ট গুলো যেমন- আউটরিচ, গেষ্টপোস্ট এবং ব্যাকলিংকের পোস্ট গুলো ইন্টার্নাল লিংক করে দিলে। এর ফলে যেটা হবে, ভিজিটর বেসিক এসইও এর পাশাপাশি অন্য বিষয় গুলো সম্পর্কেও জানতে আগ্রহী হয়ে লিংকে ক্লিক করবেন এবং আরও বেশি সময় সাইটে থাকবেন।
৬. অতিরিক্ত এ্যাড ব্যবহার না করা:
বিজ্ঞাপন জিনিসটা সবসময়ই বিরক্তিকর। আপনি নিজের কাছে নিজেই জিজ্ঞেস করুন বিজ্ঞাপন দেখতে আপনার কেমন লাগে? অবশ্যই উত্তর হবে বিরক্তিকর। অনেক সাইড দেখা যায় যারা হেডার, ফুটার, পোস্ট সাউডবার থেকে শুরু করে সাইটে ২-৩ ইঞ্চি পর পর বিজ্ঞাপন দেয়। যা ভিজিটরের জন্য বিরক্তিকর। ওয়েবসাইটে যত কম বিজ্ঞাপন ব্যবহার করা যায় তত ভালো।
এরপরও ইনকামের দিক থেকে বিজ্ঞাপন প্রয়োজন হলেও সেটা যেনো ভিজিটরের বিরক্তির কারণ না হয় তা খেয়াল রাখতে হবে। ব্যক্তিগত ভাবে আমি সাইটে পপ-আপ এ্যাড রাখার পক্ষপাতী না, এতে বাউন্স রেট বেড়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে।
৭. ভিজিটরদের অংশগ্রহণের ব্যবস্থা রাখা:
যে কোনো ভাবে ওয়েবসাইটে ভিজিটরদের অংশ গ্রহনের ব্যবস্থা রাখলে সাইটের বাউন্স রেট বাড়ার চান্স কমে যায়। তা হতে পারে সার্ভে করার মাধ্যমে আবার সাইটে কমেন্ট অপশন চালুর মাধ্যমেও ভিজিটর অংশ গ্রহন বাড়ানো যায়। এতে করে বাউন্স রেট অনেকাংশে কমানো যাবে।
৮. সাইটটিকে অনুসন্ধান করা সহজ করণ:
সাইটটিকে অনুসন্ধান করা সহজ করতে হবে। বাউন্স রেট কমিয়ে আনার অন্যতম আরেকটি বিষয় হলো ওয়েবসাইটকে খুব সহজেই খুঁজে পাওয়ার উপযোগী করে তৈরি করা। এতে ওয়েবসাইটের বাউন্স রেট কমানো যাবে।
৯. মোবাইলের জন্য সাইটটিকে অপ্টিমাইজ করণ:
ওয়েবসাইটটি যাতে যে কোন ডিভাইস বা মোবাইলে খুব সহজেই দেখা যায় তার উপযোগী করে তৈরি করুন। আজকাল সবাই মোবাইলের মাধ্যমে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তাই যেকোন ওয়েবসাইটকে মোবাইলে ব্যবহার উপযোগী করে তৈরি করলে ওয়েবসাইটের বাউন্স রেট অনেক কমানো যাবে।
এছাড়াও বাউন্স রেট কমানোর আরও অনেক উপায় আছে। তবে এই উপায়গুলো অনুসরণ করলে আশা করা যায় গুগলের এক নম্বর পেজ এ আসা সম্ভব এবং এটাকে কন্টিনিউ প্রসেসে যদি রাখা যায় তাহলে যে কোন ওয়েবসাইটকে বাউন্স রেট কমিয়ে খুব দ্রুত গুগলের এক নস্বরে অবস্থান করা এবং ধরে রাখা সম্ভব। আশা করি এ উপায় গুলো অনুসরণ করলে উপকৃত হবেন।