ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency) কি এবং এর সুবিধা ও অসুবিধা

ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency) কি এবং এর সুবিধা ও অসুবিধা
 ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency) কি এবং এর সুবিধা ও অসুবিধা

আদিম যুগে পণ্য কেনা বা বিক্রি করার জন্য কোন প্রকার মুদ্রা ব্যবস্থা ছিল না। তখন বিনিময় ব্যবস্থার প্রচলন ছিল। অর্থাৎ একটি পণ্যের বিনিময়ে অন্য আরেকটি পণ্য পাওয়া যেত। পরবর্তীতে মুদ্রা ব্যবস্থা চালু হলো যা কাগজের তৈরি নোট বা ধাতব মূল্যবান বস্তু দিয়ে তৈরি।

বর্তমানে আরও একটি মুদ্রা চালু হয়েছে যা সম্পূর্ণ ডিজিটাল আর সেটি হল Cryptocurrency। বেশ কিছু সময় ধরে Cryptocurrency অর্থাৎ ভার্চুয়াল মুদ্রা নিয়ে সারা বিশ্ব জুড়ে চলে নানা ধরনের আলোচনা। Tesla কোম্পানির CEO Elon Musk সহ অনেক বিশিষ্টজন রয়েছেন যারা এই ক্রিপ্টো মার্কেট নিয়ে ব্যপক ভাবে আগ্রহী রয়েছেন। আবার এমন কিছু মানুষও আছেন যারা এই মুদ্রা থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। আসলে “ক্রিপ্টোকারেন্সি কি”, ক্রিপ্টোকারেন্সি সুবিধা ও অসুবিধা, ক্রিপ্টোকারেন্সি কিভাবে কাজ করে, ক্রিপ্টোকারেন্সি কি বৈধ? এবং ক্রিপ্টো মার্কেট সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করব। 

ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency) কি?

“ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency)” হল একটি  Private digital currency। ক্রিপ্টোকারেন্সি নতুন একটি বিনিময় ব্যবস্থা। ‘Crypto’ শব্দটির অর্থ হল Secret বা ‘গোপন’ এবং ‘Currency’ শব্দের মানে হল ‘অর্থ’ যার বিনিময়ে বিভিন্ন পণ্যের আদান প্রদান করা হয়। ক্রিপ্টোকারেন্সি এর অর্থ হলো গোপন অর্থ। এই অর্থের লেনদেন সম্পূর্ণ গোপন থাকে এবং এর উপরে কোনো তৃতীয় ব্যক্তির হাত থাকে না।

ব্লকচেইন টেকনোলজি ব্যবহার করা একধরনের ডিসেন্ট্রালাইজড ডিজিটাল অর্থ হচ্ছে ক্রিপ্টোকারেন্সি। এটিকে অনেকে আবার ভার্চুয়াল মুদ্রাও বলে থাকে। যা অনলাইনে সেবা বা পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটি মূলত একধরনের শক্তিশালী ক্রিপ্টোগ্রাফি এসব ক্রিপ্টোকারেন্সির সঙ্গে যুক্ত থাকার ফলে অনলাইনে ঝুঁকি বিহীন লেনদেন করা সম্ভব হয়ে উঠে।

যেহেতু ক্রিপ্টোকারেন্সি এক রকমের ডিজিটাল বা ভার্চুয়াল মুদ্রা তাই এই মুদ্রা বা কারেন্সিকে কোন সরকার বা রাষ্ট্র উৎপাদন বা সরবরাহ করে না। বিভিন্ন জটিল সব অ্যালগোরিদম, ব্লক এবং ক্রিপ্টোগ্রাফি অনুসরণ করেই এক একটি মুদ্রা বা কয়েন বানাতে হয়। ক্রিপ্টোকারেন্সি গুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনলাইন শপিং এ ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি দেশের নিজস্ব কারেন্সি যেমন টাকা, রুপি, ইউরো, ডলার, পাউন্ড ইত্যাদি রয়েছে। সেগুলোর সঙ্গে আমরা সকলেই কমবেশি পরিচিত কিন্তু ক্রিপ্টোকারেন্সি এদের থেকে বেশ কিছুটা আলাদা।

ক্রিপ্টোকারেন্সি কখন শুরু হয়েছিল?

১৯৮৩ সালে এই ক্রিপ্টোকারেন্সি বা গুপ্ত মুদ্রা সূচনা হয়েছিল। ডেভিড চৌম নামক এক মার্কিন গুপ্ত লেখক ক্রিপ্টোকারেন্সি সূচনা করেছিলেন। যাকে আমরা ক্রিপ্টোকারেন্সি বলে চিনি তাকে ডেভিড চৌম নাম দিয়ে ছিলেন ক্যাশ। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত এই অদৃশ্য ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে কাজ করেছেন ডেভিড চৌম। ডেভিড চৌমের সেই নতুন প্রচেষ্টাকে প্রাণ দিয়েছিলেন জাপানের একজন ইন্জিনিয়ার সাতোসি নাকামোটো (Satoshi Nakamoto)। তিনি ক্রিপ্টোকারেন্সি ২০০৯ সালে তৈরি করেছিলেন। বর্তমান বিশ্বে বৃহত্তম Cryptocurrency হল Bitcoin এবং এর সঙ্গে সঙ্গেই ক্রিপ্টোকারেন্সির নামটি প্রকাশ্যে চলে আসে। আর এই বিটকয়েন তৈরি করেছেন ইন্জিনিয়ার সাতোসি নাকামোটো (Satoshi Nakamoto)। বিশ্ব জুড়ে বর্তমানে ১,০০০ টিরও বেশি ক্রিপ্টোকারেন্সি রয়েছে।

ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল্য:

ক্রিপ্টোকারেন্সি-Cryptocurrency নোট বা কয়েনের মত ছাপা কোনো আক্ষরিক সংখ্যা নেই কিন্তু ক্রিপ্টোকারেন্সির একটি নির্দিষ্ট মূল্য বা ভ্যালু রয়েছে। এটি ডিজিট আকারে অনলাইনে থাকায় একে ডিজিটাল মুদ্রা বা ভার্চুয়াল মুদ্রা বলা হয়। এই মুদ্রা দিয়ে আপনি পণ্য বা সেবা কেনাবেচা করতে পাবেন কিন্তু এটিকে ব্যাংকে বা লকার বা আপনার পকেটে নিয়ে ঘুরতে পারবেন না।

ক্রিপ্টোকারেন্সির একটি ভ্যালু রয়েছে যা অন্যান্য কারেন্সির ভ্যালুর থেকে কয়েক হাজার গুণ বেশি। ডলারের থেকেও কয়েক হাজার গুণ বেশি ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল্য। কিন্তু ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল্য অপরিবর্তিত থাকে না। এর মূল্য সর্বদা উঠানামা করে। যার ফলে একদিনের ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল্য বিভন্ন রকমের হতে পারে।

ক্রিপ্টোকারেন্সি কিভাবে কাজ করে?

Cryptocurrency ব্লকচেইন এর মাধ্যমে কাজ করে। ব্লকচেইন পদ্ধতির সূচনা হয় ১৯৮০ সালে। চেইন কথার অর্থ হলো শিকল। সহজ ভাবে বললে ব্লকচেইন হল একটি চেনের মধ্যে অনেকগুলি ব্লকের সংযুক্ত অবস্থা। যখন ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেন করা হয় তখন লেনদেনের সমস্ত তথ্য রেকর্ড করে রাখা হয় অর্থাৎ একটি ব্লকে লেনদেনের তথ্য নিরাপত্তার সহিত রাখা হয়। ব্লকগুলোকে নিরাপত্তা প্রদান করার জন্য একটি শক্তিশালী কম্পিউটার দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হয় যাকে কম্পিউটার মাইনিং বলা হয়। যারা কম্পিউটার মাইনিং করে তাদের মাইনার বলা হয়। ক্রিপ্টোকারেন্সি গুলো হ্যাস ফাংশন এবং ডিজিটাল স্বাক্ষর এর মত ক্রিপ্টোগ্রাফিকের মাধ্যমে কাজ করে।

ক্রিপ্টোকারেন্সির কাজ কি?

আপনার কাছে যদি Cryptocurrency মুদ্রা থেকে থাকে সেগুলো দিয়ে আপনি কি কি করতে পারবেন তা জেনে নেওয়া যাক:-

১. ক্রিপ্টোকারেন্সি মুদ্রা দিয়ে আপনি পণ্য বা সেবা কেনাবেচা করতে পারবেন।

২. ক্রিপ্টোকারেন্সি মুদ্রা দিয়ে আপনি অনলাইনে লেনদেন করতে পারবেন কিন্তু সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই আইনগত অনুমতি নিতে হবে।

৩. ক্রিপ্টোকারেন্সিকে আপনি দেশ-বিদেশে আদান-প্রদান করতে পারবেন।

ক্রিপ্টোকারেন্সি এর সুবিধা:

বর্তমানে ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার বেড়েই চলেছে। ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করার আগে জেনে নেওয়া দরকার এই ক্রিপ্টোকারেন্সির সুবিধা:-

১. আমরা যে রমক নোট ব্যবহার করি ১০০০ টাকার নোট ও ৫০০ টাকার নোট সেক্ষেত্রে জাল নোট বা ছেঁড়া নোট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, কিন্তু ক্রিপ্টোকারেন্সি একটি ডিজিটাল মুদ্রা এক্ষেত্রে জাল বা বিকৃত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

২. আপনি যদি হঠাৎ দ্রুত কোন দূরবর্তী স্থানে কাউকে টাকা পাঠাতে চান সেক্ষেত্রে ক্রিপ্টোকারেন্সি হল অন্যতম মাধ্যম। কারণ ক্রিপ্টোকারেন্সি হল ডিজিটাল মুদ্রা আর ডিজিটাল মুদ্রা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে বেশি সময় লাগে না।

৩. যেহেতু ক্রিপ্টোকারেন্সির কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠান নেই তাই ক্রিপ্টোকারেন্সির কোনো নির্দিষ্ট শর্তাবলী বা নির্দেশাবলী নেই।

৪. টাকা ট্রান্সফারের সময় কিছু টাকা কেটে নেওয়া হয়ে থাকে, কিন্তু ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষেত্রে কোন চার্জ কাটা হয় না।

৫. ক্রিপ্টো মুদ্রাকে আপনি এটিএম এর মাধ্যমে টাকায় রূপান্তর করতে পারবেন।

৬. ক্রিপ্টোকারেন্সি কোনো সরকার বা রাষ্ট্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না।

৭. ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে খুব ভাল বিকল্প কারণ এর মূল্য অনেকটা বেড়ে যায়।

৮. ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষেত্রে কোন ব্যাংকের প্রয়োজন হয় না।

ক্রিপ্টোকারেন্সি এর অসুবিধা:

ক্রিপ্টোকারেন্সির যে রকম সুবিধা রয়েছে সেরকম অসুবিধাও রয়েছে:-

১. ক্রিপ্টোকারেন্সি কোন সরকার বা রাষ্ট্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না। অর্থাৎ ক্রিপ্টোকারেন্সির উপর কারো নিয়ন্ত্রণ থাকেনা। ফলে ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল্য প্রবলভাবে উঠা নামা করে।

২. ক্রিপ্টোকারেন্সি যেহেতু ডিজিটাল বা ভার্চুয়াল মুদ্রা তাই এতে হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

৩. ক্রিপ্টোকারেন্সির কোনো বাস্তবিক অস্তিত্ব নেই।

৪. ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার সব দেশে বৈধ নয়।

৫. ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার সীমিত পরিসরে হয়ে থাকে।

৬. ক্রিপ্টোকারেন্সি অবৈধ কার্যকলাপ পরিচালনার আদর্শ পন্থা হতে পারে।

বর্তমান সময়ে যেসব ক্রিপ্টোকারেন্সি খুবই জনপ্রিয় সেগুলো হলো:
  • Bitcoin
  • Ethereum
  • Ripple
  • Tether
  • Litecoin
  • Monero
  • Cosmos
  • Peercoin
  • Bit Torrent
  • Name Coin
  • Stellar
  • Polkadot
  • Doge Coin
  • Bitcoin Cash
  • Binance Coin
  • Cardano
  • TRON
  • Ethereum Classic

ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রকারভেদ:

সবচেয়ে জনপ্রিয় Cryptocurrency হল বিটকয়েন কিন্তু বিটকয়েন ছাড়া আরও অনেক ক্রিপ্টোকারেন্সি রয়েছে। কিছু জনপ্রিয় শীর্ষ ক্রিপ্টোকারেন্সি হল-

বিটকয়েন (Bitcoin):

বিটকয়েন ২০০৯ সালে Satoshi Nakamoto শুরু করেছিলেন। যা ছিল বিশ্বের প্রথম Cryptocurrency। এটি সব থেকে বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করে। বর্তমানে সবথেকে বেশি ব্যয়বহুল ক্রিপ্টোকারেন্সি হল বিটকয়েন যার মূল্য প্রায় আকাশছোঁয়া বলা যায়।

Info IT BD সকল আপডেট পেতে ফলো করুন আমাদের গুগল নিউজ চ্যানেলে

ইথেরিয়ম (Ethereum):

২০১৫ সালে ইথেরিয়ামের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ইথেরিয়াম হল বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ ব্লকচেইন নেটওয়ার্ক। আগে ইথেরিয়ামের মূল্য খুব বেশি ছিল না। কিন্তু বর্তমানে একটি ইথেরিয়ামের মূল্য প্রায় ৩ হাজার মার্কিন ডলারের সমান।

ডগি কয়েন (Doge Coin):

এ কয়েনটিতে কুকুরের ছবি আছে বলে এর নাম ডগি কয়েন। এর উপর কুকুরের ছবি থাকায় এটি সকলের কাছে একটি মিম এ পরিণত হয় এর ফলে টেসলা কোম্পানির মালিক ইলন মাস্ক এর সহায়তায় এর মূল্য বৃদ্ধি পায়।

লাইট কয়েন (Light coin):

২০১১ সালের চার্লি লি প্রথম লাইট কয়েন চালু করেন। লাইট কয়েন সবচেয়ে দ্রুততম লেনদেন হিসেবে পরিচিত।

কার্ডানো (Cardano):

অন্যান্য Cryptocurrency গুলোর মতই কার্ডানো খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করে। একটি কার্ডানোর মূল্য প্রায় ৬৯ মার্কিন ডলারের সমান। বর্তমানে এর মূল্য ক্রমশ বেড়েই চলেছে।

বিনান্স কয়েন (Binance Coin):

বর্তমানে খুব জনপ্রিয়তা অর্জনকারী Cryptocurrency গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বিনান্স কয়েন। এই কয়েন গুলোর মাধ্যমে ভ্রমণের জন্য ট্রেন ও এয়ারপ্লেন বুক সহ ট্রেডিং করতে পারবেন।

নেম কয়েন (Name Coin):

নেম কয়েন মূলত বিটকয়েনের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। নেম কয়েনের ডোমেন নেম হলো সেন্সরশীপ প্রতিরোধ ডোমেন নেম .bit। যার উপর  ICANN এর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই।

রিপল (Ripple):

এই ক্রিপ্টোকারেন্সিটি ২০১২ সালে আমেরিকান কোম্পানি দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। এটি একটি  ক্রিপ্টোকারেন্সির পাশাপাশি  ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জও বটে।

2 thoughts on “ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency) কি এবং এর সুবিধা ও অসুবিধা”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top