সম্প্রতি বেইলি রোডের গ্রিন কজি কটেজ নামের সাততলা ভবনটিতে রাত পৌনে ১০ টার দিকে আগুন লাগে। এতে ৪৬ জন মারা যান এবং ১২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আসলে এই সব ঘটনা গুলোকে নিছক দুর্ঘটনা বলে উড়িয়ে দিলে চলবে না, আসলে এটি একটি কাঠামোগত হত্যাকান্ড।
আজ কথা বলবো আগুন লাগলে করনীয় কি সে বিষয় নিয়ে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনা গুলোর কারণে এখন “আগুন” শব্দটা শুনলেও যেন ভয়ে, আতঙ্কে বুক কেঁপে উঠে। নিমতলী ট্র্যাজেডি, চকবাজার অগ্নিকান্ড, বনানীর এই বিভীষিকাময় অগ্নি ঘটনা যেন বাংলাদেশের সব মানুষকেই দগ্ধ করে দিয়েছে।
হঠাৎ আগুন লাগলে আমরা অনেকেই জানি না ঠিক কী করা উচিত। আবার অনেকেই আগুন লাগলে করনীয় কাজ গুলো জানলেও ঘাবড়ে যাওয়ার কারণে বা ভয় পেয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি না।
হঠাৎ আগুন লাগলে কিছু কৌশল অবলম্বন করে আমরা হয়ত বেঁচেও যেতে পারি বা ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা কমাতে পারি।
আর তাই আমি আজকে আগুন লাগলে করনীয় নিয়ে এমন কিছু কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো যে কাজগুলো মাথা ঠান্ডা রেখে করলে আগুনের ভয়াবহতা থেকে বাঁচা গেলেও যেতে পারে।
আরও পড়ুনঃ আয়কর রিটার্ন কি? আয়কর রিটার্ন দাখিল কাদের করতে হবে?
আগুনের ধরন ও নির্বাপণের উপায়:
আগুন নিভাতে হলে আগে আগুনের ধরন সম্পর্কে জানতে হবে। কেননা গ্যাসের আগুন আপনি পানি দিয়ে নিভাতে পারবেন না। আগুনের উৎপত্তি, জ্বলার উপাদান এগুলোর ভিত্তিতে আগুন সাধারনত ৪ ধরনের হয়ে থাকে-
১. সলিড ফায়ার (কাঠ, বাঁশ ইত্যাদির আগুন)।
২. লিকুইড ফায়ার (তেল, পেট্রোল, ডিজেল ইত্যাদির আগুন)।
৩. গ্যাস ফায়ার (গ্যাস লাইন, গ্যাসের চুলা ইত্যাদির আগুন)।
৪. মেটাল ফায়ার (সোডিয়াম,পটাশিয়াম ইত্যাদির আগুন)।
১. সলিড ফায়ার নির্বাপণ:
পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ছিটিয়ে এ ধরনের আগুন নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে।
২. লিকুইড ফায়ার নির্বাপণ:
পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ছিটিয়ে এধরনের আগুন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। বরং পানি ব্যবহার করলে এ ধরনের আগুন আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তাই এ ধরনের আগুন নিয়ন্ত্রনের জন্য কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস, ফোম, ড্রাই পাউডার বেশি কার্যকরী। যদি এগুলোর কোন কিছুই হাতের কাছে না থাকে তাহলে বালু ছিটিয়ে দিয়েও আগুন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
আরও পড়ুনঃ অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট খোলার সঠিক নিয়ম
৩. গ্যাস ফায়ার নির্বাপণ:
এ ধরনের আগুন কোনো ভাবেই পানি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস, ফোম, ড্রাই পাউডার ইত্যাদির সাহায্যে এই আগুন নির্বাপণ করা হয়।
৪. মেটাল ফায়ার নির্বাপণ:
মেটাল ফায়ারও পানি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। উপরোক্ত উপায়ে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস, ফোম, ড্রাই পাউডার, বালি ইত্যাদির মাধ্যমেই এ ধরনের আগুন নেভানো যায়। তবে হাতের কাছে যদি কম্বল, ছালার বস্তা, ভারী কাঁথা বা তোষক জাতীয় কিছু থাকে, তবে এগুলো দিয়ে চাপ দিয়েও এই আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে অবশ্যই এগুলো আগুনে দেওয়ার আগে ভিজিয়ে নিতে হবে।
অগ্নিকান্ড সহ যেকোন দুর্ঘটনার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে সংবাদ দিতে ডায়াল করুন
আগুন লাগলে করনীয় কিছু কার্যকরী কৌশল
আমাদের বাসায়, অফিসে বা বাইরে কোথাও হঠাৎ আগুন লাগলে একজন সচেতন মানুষ হিসেবে আমাদের করনীয় কাজগুলো কি কি বা আগুন লাগলে করনীয় কি তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
- মাথা ঠান্ডা রেখে প্রথমেই বিদ্যুতের সুইচ এবং গ্যাসের চুলা বন্ধ করার চেষ্টা করুন।
- কাছাকাছি ফায়ার সার্ভিসের অফিসে যোগাযোগ করুন অথবা কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষে ফোন করুন। ফোন নম্বার: ০২-৯৫৫৫৫৫৫ অথবা ০১৭৩০-৩৩৬৬৯৯। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে আপনার ফোনে বা হাতের কাছে সবসময় জরুরী ফোন নম্বর গুলো যেমন- নিকটস্থ থানা, ফায়ার সার্ভিস, হাসপাতাল এগুলোর নম্বর রাখুন যাতে জরুরী পরিস্থিতে সাহায্য চাইতে পারেন। সেটা সম্ভব না হলে ৯৯৯ এই নম্বরে ফোন দিয়েও সাহায্য চাইতে পারেন।
- বহনযোগ্য অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র ব্যবহার করুন।
- বৈদ্যুতিক লাইনে/যন্ত্রপাতিতে আগুন ধরলে পানি ব্যবহার করবেন না। বহনযোগ্য অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস, ফোম, ড্রাই পাউডার এক্সটিংগুইশার ব্যবহার করুন। এগুলো না থাকলে শুকনো বালু ব্যবহার করুন।
- তেল জাতীয় পদার্থ থেকে লাগা আগুনে পানি ব্যবহার খুব বিপদজনক। বহনযোগ্য ফোম টাইপ ফায়ার এক্সটিংগুইশার বা শুকনো বালু অথবা ভেজা মোটা কাপড় বা চটের বস্তা দিয়ে চাপা দিন।
- বাসায় বা অফিসে আগুন লাগলে মূল্যবান জিনিস সরানোর চেষ্টা করবেন না। আপনার নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জীবন বাঁচানোই এ সময় গুরুত্বপূর্ণ। তাই অযথা সময় নষ্ট করবেন না।
- পরিস্থিতি যত শান্ত রাখা যায় বিপদ থেকে মুক্তির সম্ভাবনা তত বেশি বেড়ে যায়। তাই পরিস্থিতি শান্ত রাখার চেষ্টা করুন।
- শরীরে আগুন লাগলে ঘাবড়ে গিয়ে দৌড়াবেন না। গড়িয়ে গড়িয়ে যেদিকে গন্তব্য সেদিকে যান। কাপড় দিয়ে নাক ঢাকুন। আর হাতের কাছে পানি থাকলে পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিন।
- সিড়িতে ধোঁয়া দেখলে ওপরে উঠবেন না এবং ছাদে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না।
- সিড়ি দিয়ে নামা বিপদজনক হলে বারান্দ বা জানালার কাছে চলে যান এতে করে সেময় বেশি পাওয়া যায়।
- ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন পথ পরিহার করুন। প্রয়োজন হলে উপুর হয়ে বা হামাগুড়ি দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করুন। কেননা ধোঁয়া ওপরে ওঠে বলে নিচের বাতাসে অক্সিজেন তলনামূলক বেশি থাকে।
- ধোঁয়ায় কিছু দেখা না গেলে এবং একাধিক সদস্য থাকলে একজনের পেছনে অন্যজন হামাগুড়ি দেবেন, একে অন্যের কাপড় বা পা ধরে এগিয়ে যাবেন।
- মনোবল হাড়াবেন না কারণ এটি সবচাইতে কার্যকরি। তাই কিছুক্ষণ পরপর একজন অন্যজনকে সাহস দিলে বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
রেফারেন্স: ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর
রেফারেন্স: পিকচার সংগ্রহ- pixabay.com
পরিশেষে উপরে আমরা আগুন লাগলে করনীয় কি সেই সকল বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। যদি উপরে উল্লেখিত কৌশল গুলো যথাসম্ভব কাজে লাগানো যায় তাহলে ক্ষতির পরিমান কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব।