ভাগ্য বনাম সাফল্য (Luck Vs Success) মূলত আমরা একই বিষয় বলে জেনে থাকি। কিন্তু আসলে কি তাই? আজকের আর্টিকেলে আমরা ভাগ্য বনাম সাফল্য (Luck Vs Success) এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো। তাই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়লে আশা করি অনেক কিছু জানতে ও শিখতে পারবেন যা আপনার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কাজে আসবে?
সাফল্য কোনও আকস্মিক ব্যাপার নয়। এটি আমাদের মনোভাব বা দৃষ্টিভঙ্গির ফল এবং সেই মনোভাব আমরা নিজেরাই নির্বাচন করে থাকি। সুতরাং সফলতা আমাদের নিজেদের নির্বাচনের উপর নির্ভরশীল, কোন আকস্মিকতার উপর নয়। অনেকেই জীবনে একটা বড় ধরনের লটারী জেতার আশা করে, কিন্তু লটারি জেতাকেই সফলতা বলে?
একজন ধর্মযাজক একটি ফসলে পরিপূর্ণ ক্ষেতের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। সুন্দর ফসল দেখে তিনি সেখানে দাড়িয়ে ফসলের প্রশংসা করলেন এবং সেই ক্ষেতের মালিক ধর্মযাজকে দেখে তার কাছে আসলো। ধর্মযাজক যখন জিজ্ঞেস করলেন, ‘ভগবান তোমাকে ক্ষেতভরা ফসল দিয়েছেন তুমি কি তার কাছে কৃতজ্ঞ? ক্ষেতের মালিক জবাবে বললো, হ্যাঁ ভগবান আমাকে এই ক্ষেতটি দিয়েছেন তার জন্য আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ, কিন্তু এই ক্ষেতভরা ফসল আমার নিজ পরিশ্রমের ফল।’
এটা ভাবতে আশ্চর্য লাগে যে কোনও ব্যক্তি জীবনে একের পর এক সফলতা লাভ করে আবার কেউ কেউ কেবল কাজের জন্য প্রস্তুত হয়। এটাও খুব আশ্চর্যের বিষয় যে একজন মানুষ তার জীবনে একটার পর একটা বিপত্তি কাটিয়ে তার লক্ষ্যে পৌছায়, আর একজন একটামাত্র বিপত্তি অতিক্রম করতেই হিমসিম খায় এবং তার লক্ষ্যে পৌছাতে পারে না। উপরের দুটি প্রশ্ন যদি স্কুল-কলেজের পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভূক্ত করা হত এবং যথাযথ উত্তর যদি শিক্ষার্থীদের শেখানো হত তবে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় নতুন দিক উন্মোচিত হত। যারা অসাধারণ ব্যক্তি তারা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে না, আর যারা সাধারণ ব্যক্তি তারা জীবনের নিরাপত্তা খোঁজেন। আমরা জীবনে যে লক্ষ্যে পৌছাতে চাই তার প্রতি স্থির দৃষ্টি রাখা উচিত। আমরা যা চাইনা তার প্রতি নজর না দিলেও চলে।
শ্রীকৃষ্ণ তার ধর্ম গ্রন্থে বলেছেন, “ভাগ্য কখনো সিদ্ধান্ত পাল্টাতে পারে না, কিন্তু সিদ্ধান্ত ভাগ্যকে পাল্টাতে পারে। তাই ভাগ্যের উপর নির্ভরশীল হওয়া যাবে না- মনসংযোগ করতে হবে সিদ্ধান্তের উপর। তাই প্রশান্ত মনে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলা হলো। আজকের সিদ্ধান্তের উপর ভবিষ্যতের ভাগ্য ভালও হতে পারে আবার দুর্ভাগ্যও হতে পারে।”
তাই আমরা ভাগ্যের সংজ্ঞা এভাবে দিতে পারি- যখন কোন কিছু অর্জনের মাধ্যমে আমাদের কাছে আসে সেটিকে ভাগ্য বলে। আরও সহজভাবে বলতে গেলে, একজন লোক তার সামনে খাবার নিয়ে বসে আছে। সে বিধাতার কাছে প্রানপণ প্রার্থনা করছে বিধাতা এই খাবার আমাকে খাইয়ে দিবে। কিন্তু একটা সময় পর সে দেখতে পেল তার খাবারটি একটি বিড়াল খেয়ে ফেলেছে। তখন সে বলে উঠলো, এই খাবার আমার ভাগ্যে ছিল না; যদি আমার ভাগ্যে থাকত তাহলে আমি এই খাবার খেতাম, কিন্তু সেটা হয়নি। আসলে কি তাই?
বিধাতা কখনোই আপনাকে খাইয়ে দিবে না, বরং আপনাকে নিজে থেকেই সেটা খেতে হবে। আপনাকে মনে রাখতে হবে বিধাতা কেবল মাত্র পরিবেশ তৈরি করে দিবে। অর্থাৎ আপনার সামনে যে খাবার ছিল তা বিধাতার আর্শীবাদের দরুন সম্ভব হয়েছে। আর যদি আপনি নিজে থেকে খাবারটি খেয়ে নিতেন তাহলে এটি আপনার জন্য ভাগ্যে পরিনত হত।
এবার একটি গল্প শোনাই তাহলে বিষয়টি আরও বুঝতে পারবেন- একজন ধর্মযাজক ইশ্বরের প্রতি ভীষণ ভক্ত। সে এতটাই ইশ্বরের প্রতি বিশ্বাসী যে, স্বয়ং ইশ্বর তাকে সবকিছু করে দিবে। তাই সে ইশ্বরকে পরীক্ষা করার জন্য একটি পণ করলো। তখন ঔ শহরে প্রবল বন্যা দেখা দিলো। যখন বন্যার পানি শহরের রাস্তায় ঢুকে পরলো, তখন শহরের মানুষ জন তাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে অন্য জাগায় আশ্রয় নিতে শুরু করলো। ঠিক তখনই ধর্মযাজক ঘোষনা দিল আমি এখানেই থাকবো এবং কোথাও যাবো না, আমার ইশ্বর আমাকে রক্ষা করবে।
বেশ কিছু দিন পর কিছু ধর্ম প্রাণ মানুষ বা তার অনুসারীরা এসে ধর্মযাজককে বলল; জনাব শহরে বন্যা প্রবল আকার ধারন করেছে তাই আপনাকে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিতে হবে, তাই আপনি আমাদের সাথে চলুন। ধর্মযাজক বলল, তোমরা চিন্তা করো না আমার কিছুই হবে না, আমার ইশ্বর আমাকে বাঁচাবে।
এই কথা শুনে সবাই সেখান থেকে চলে গেল। বেশ কিছু দিন পর যখন বন্যার পানি ধর্মযাজকের বাড়িতে ঢুকলো তখন কিছু লোক নৌকা নিয়ে আসলো এবং বলল জনাব চলুন আমাদের সাথে। তখনও সে একই কথা বলল, আমার ইশ্বর আমাকে বাাঁচাবে তোমরা চলে যাও এবং আমার জন্য চিন্তা করো না। বেশ কিছু দিন পর বন্যার পানি বাড়তে বাড়তে অধিক পরিমাণে বেড়ে গেল তখনও সে অন্য কোথাও আশ্রয় নিলো না। শেষ পর্যন্ত বন্যার পানি যখন আরও প্রবল আকার ধারণ করলো তখন সে তার বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিলো।
তখন আবার কিছু লোক হেলিক্টার নিয়ে তাকে বাঁচানোর জন্য আসলো এবং আগের মত এবারও সবাইকে ফিরিয়ে দিলেন, আর বললেন আমার ইশ্বর আমাকে রক্ষা করবে তোমরা চলে যাও। তখন সবাই তাকে না নিয়ে ফিরে গেল। আস্তে আস্তে করে বন্যার পানি তার বাড়ির ছাদের উপর উঠে পরলো তখনও সে অন্য কোথাও আশ্রয় নিলো না। এক পর্যায় ধর্মযাজক বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেলেন। কি বুঝলেন?
এই ধর্মযাজক মারা যাওয়ার পর ইশ্বরকে প্রশ্ন করলো- হে আমার ইশ্বর আমি তোমার কতই না ভক্ত ছিলাম, কতই না বিশ্বাস করতাম এবং কতই না প্রার্থনা করেছি তোমার জন্য, কিন্তু তুমি এর প্রতিদান হিসেবে আমাকে কি দিলে? তুমি কেন আমাকে বন্যার পানি থেকে রক্ষা করলে না, আমি বন্যার পানিতে মারা গেলাম। আমি তোমাকে কতই না বিশ্বাস করতাম, এর প্রতিদান স্বরূপ তুমি আমাকে মৃত্যু দিলে?
আরও পড়ুনঃ পরকাল বলে কি কিছু আছে?
তখন ইশ্বর ধর্মযাজককে বলল, হে আমার প্রিয় আমি তোমার জন্য কি না করিনি। শহরে বন্যার পানি ঢোকার পর যে লোক গুলো তোমাকে বাঁচাতে গিয়েছিল তারা কে ছিল? যখন নৌকা নিয়ে তোমাকে বাঁচাতে গিয়েছিল তারা কে ছিল? আবার যখন হেলিকাপ্টার নিয়ে যে লোকগুলো তোমাকে বাঁচাতে গিয়েছিল তারা কে ছিল? তারা অন্য কেউ ছিল না। তাদেরকে আমি নিজে পাঠিয়েছিলাম, তারা আর কেউ ছিল না আমি স্বয়ং নিজে ছিলাম। কিন্তু তুমি নিজে থেকেই সকল সাহায্য প্রত্যাক্ষান করে দিয়েছ। এখন তুমি বল আমি কিনা করিনি তোমার জন্য। আশা করি সকলে গল্পটির মাধ্যমে বুঝতে পেরেছেন।
পরিশেষে বলতে পারি, ভাগ্য বনাম সাফল্য (Luck Vs Success) বলে আমরা যা ভাবি আসলে সেটি সঠিক নয়। ভাগ্য বনাম সাফল্য (Luck Vs Success) একটি অপরটির সাথে সম্পর্ক যুক্ত। তাই আমরা বলতে পারি ভাগ্য পূর্ণতা লাভ করে সাফল্যের মাধ্যমে। তাই আমরা বলতে পারি অর্জনের মাধ্যমে যে সাফল্য আসে সেটি হলো ভাগ্য। আশা করি সকলে বুঝতে পেরেছেন।